Boishakhi utsob

  • বাংলা বর্ষবরনের উৎসব হোক সবার

    হাসিনা আকতার নিগার

    বিশ্বের প্রতিটি দেশে নতুন বছরের আগমনকে ঘিরে থাকে আনন্দ আয়োজন। আমাদের দেশেও ইংরেজি সালকে আধুনিক কায়দাতে বরন করে। কিন্তু প্রাচীন কাল থেকে বাংগালীর মূল বর্ষবরণ হল ১লা বৈশাখ। পুরোনো হিসাবের খাতাকে চুকিয়ে দিয়ে খুলে নতুন হিসাব। যা ব্যবসায়ীদের জন্য হালখাতার উৎসব। ক্রেতাদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করে দোকানে দোকান চলে নতুন বছরের লেন দেন।

    এখনো গ্রাম অঞ্চলে হালখাতার আয়োজন দেখা যায়। বিশেষ করে স্বর্ন ব্যবসায়ীদের কাছে হাল খাতা বেশ গুরুত্বপূর্ন।

    সে সাথে বৈশাখী মেলাতে সমাগম ঘটে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের সাথে বড়দের। খেলনা সহ নানা ধরনের জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসে বিক্রেতারা মেলার মাঠে। গ্রামের বৈশাখী উৎসবে ইলিশ পান্তা ভর্তার বাহুল্যতা নাই। সেখানে পিঠা পুলি হয় খাবারের আয়োজনে। গ্রাম বাংলার মানুষের বৈশাখী উৎসব এর সাথে কৃষি কাজের সম্পর্ক রয়েছে বাংলা সনের সূচনা থেকে।।আর তাই জমির খাজনা এখনো বাংলা সনের হিসাবে গগনা করা হয়।

    কালের প্রবাহে ১লা বৈশাখের উৎসব হয়ে উঠে সার্বজনীন। গ্রাম ছাড়িয়ে শহুরে জীবনে আসে এ উৎসব। রাজধানী ঢাকাতে ছায়ানটের রমনার বটমূলে বর্ষবরণ এর পর চারুকলার মংগল শোভাযাত্রা এক সময় কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক ছিল।

    দুঃখজনক হলেও সত্যি এ উৎসবের পসারতার সাথে সাথে বাড়তে থাকে ধর্মীয় বির্তক। বলা হয় বৈশাখী উৎসব হিন্দুয়ানী বিষয়। আর এর রেশ ধরে বোমা হামলা, নারীর উপর নির্যাতন নানা কিছু ঘটে।
    যার ধারাবাহিকতাতে বিগত ২/৩ বছর ধরে ১ লা বৈশাখের উৎসবে বেশ কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বাংগালীর প্রানের এ উৎসবকে ঘিরে ঈদের মত কেনাকাটা হয় ঘরে ঘরে। চাকরীজীবিরা বোনাস পায়। কিন্তু এত কিছুর পরে ধর্মের দোহাই দিয়ে যারা বিগত সময়ে এ উৎসবকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে তাদের ভয়ে শংকিত হয় সাধারণ মানুষ। যার কারনে মংগল শোভা যাত্রায় এবার মুখোশ বাঁঁশি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে সব অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে। মোট কথা লাল পাড়ে সাদা শাড়ির সাজে প্রান খুলে নতুনকে বরনের আমেজ আর নেই।

    "ধর্ম যার যার উৎসব সবার" - এ কথা ধর্মীয় উৎসবের বেলাতে বলা হয়। অথচ বাংগালী প্রানের উৎসব ১লা বৈশাখে এ শ্লোগান মানতে নারাজ। তাই সকল বাধা পেরিয়ে বাংলা বর্ষবরণের উৎসব হোক সবার এ প্রত্যাশাই চিরন্তন।