valobasa






  • ভালোবাসার নামে নির্ভরতা নারীর জীবনে অভিশাপ -
    - হাসিনা আকতার নিগার

    সতী সাবিত্রী স্ত্রীর ভুমিকা পালন করতে করতে যে মেয়েটি ভুলে গেছে তার নিজের অস্তিত্ব সে কি পারবে ঘুরে দাঁড়াতে? এমন চিন্তাতে শংকিত হয়ে এ সনাজে হাজারো নারী মুখ বুজে সয়ে যায় মানষিক শারিরীক নির্যাতন। এক সময় যে পুরুষটিকে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ পুরুষ মনে করত। একদিন দেখল সে পুরুষটি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার থেকে। প্রেম ভালোবাসা মিথ্যা হয়ে যায় এক নিমেষে। খুঁজে নিয়েছে নতুন কোন ঠিকানা। ঘরের বউ পানসে
    সহজ কথায় স্বামী তার অন্যায় আচরনকে সঠিক করতে সব কিছুতে দোষ খুঁজে ঘরের মানুষটির।সত্য মিথ্যার বাহনাতে দাম্পত্য কলহ। তবু ঘর টিকানোর শত চেষ্টা।

    স্ত্রী সে পরিবেশে নিজেকে সংসারে টিকিয়ে রাখতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে।কিন্তু এ দম জীবনের সামনে অন্ধকার ছাড়া কিছু নেই এটা সে নারী চিন্তা করতে পারে না। ভয় পায় ঘরের বাইরের জীবনটাকে।অবশ্যই চলার পথে অনেক বাঁধা । আর নারীদের জন্য সে পথ আরও কঠিন।

    এমন ভাবনারগুলো অলিকে আজকাল নাড়া দেয়। কিন্তু স্বামীর সাথে বিদ্রোহ করে বের হয়ে আসার সাহসটুকু পায় না। পরিবারের কাছে বলতে পারেনা একান্ত কষ্টের কথা।তবে সে জানত না যে অনাগত দিনগুলোতে সে আরও বড় আঘাত পেয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে যাবে। মানুষের প্রতি বিশ্বাসটুকু নষ্ট হবে।

    বৈশাখী ঝড়ের মত এক নিমেষে সব এলোমেলো হয়ে যায় অলির।স্বামী তার ঘরে ফেরে না। নতুন প্রেমে বিভার। ঠিক তখনি বসন্তের দমকা হাওয়ার মত শিমুল অলিকে এক স্বপ্ন দুয়ার খুলে দেয়।কাবিক্য কথার ফুলঝুড়িতে শিমুল ভুলিয়ে দিত অলির জীবনের কষ্টগুলো। প্রাত্যহিক একাকি জীবনে শিমুল যেন বাঁচার অবলম্বন হয়ে উঠে অলির। বলতে গেলে অলি ভালবাসার আবেশে আর এক পরনির্ভরশীলতার পথে চলা শুরু করে শিমুলের সাথে। ছোটবেলা থেকে নারীদের আত্মনির্ভরশীলতা হয়ে উঠা কাকে বলে অলি জানতে পারেনি কোনদিন ।পারেনি নিজের একটা জীবন আছে তা জানতে। শিমুলের সাথে যখনি তার এ বন্দী জীবনের কথা হত সে সাহস দিত আর বলত অলিকে মুক্ত আকাশে।ডানা মেলে বাঁচার জন্য পাশে থাকবে। অলি এবার বাঁচবে তার সাথে নিজের মত করে।

    আবেগী আলাপে আলাপে কখন যেন আরেক বন্ধনের হাতছানিতে বাধা পড়ে অলি। শিমুল পাশে আছে এই ভেবে অলি নীরবতা ভেংগে মুক্তি চায় স্বামীর কাছে। সন্তানকে দিতে চায় শান্তির পরিবেশ।তবে ভালোবাসার চোরকাঁটাতে যে এতটা বিষ তা কেমন করে জানবে অলি।

    একদিন অলি সন্তানসহ নিজেই ঘর ছাড়ে শিমুলের স্বপ্নকে সাথি করে। বোকা অলি জানত না কাব্যময় কথাতে রাত কেটে গেলেও দিনের আলোর ব্যস্ত জীবনে শিমুল অন্য মানুষ। আর সেখানে শিমুল অলির যে যোজন যোজন ব্যবধান। শিমুল চায় না অলি তার ব্যক্তি জীবনে ছায়া ফেলুক।

    এদিকে অলি তার অত্যাচারী বহুগামি স্বামী থেকে মুক্তি নিয়ে বিচ্যুত হয়েছে পরিবার সমাজ থেকে।ছোট এক ঘরে তার জীবনটা আরও বন্দীময় হয়ে গেল। ছোট ছেলেটা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আনমনে খুঁজে তার খেলার সাথীদের।এসব দেখে অলির অনুতাপ হয়।নিজেকে অপরাধী ভাবে। দিন পার হয়ে যায়। কিন্তু শিমুল নির্বাক। অলি র সামনে কেবল অপেক্ষার পালা।

    শিমুলের সেই সাথে পথ চলার কাল্পনিক গল্পটা অলিকে আরো বেশি এলোনেলো করে দেয়। কারন।বাস্তব জীবনে স্রোতের বিপরীতে হাঁটার মানুষ যে শিমুল নয় তা সে বুঝে গেছে।

    মাঝে মাঝে অলি ভাবে সারাটা জীবন ভালোবাসার মোহে চলতে গিয়ে এত বড় ভুল করল। মুক্তি কি তার হয়েছে? তবে কি নিজের মুক্তি নিজেই ঠিক করে নেয়াই ভালো ছিল। শিমুল আর তার স্বামীর মাঝে তো তেমন কোন ব্যবধান নেই।।স্বামী নিজের মত করে তাকে সংসারে রাখতে চেয়ে। কখনো তার চাওয়া পাওয়াকে মুল্য দেয়নি।

    আর শিমুল নিজের জন্য তাকে ব্যবহার করছে সাময়িক প্রশান্তি পেতে । এটা কি ভালবাসা না মোহ শিমুলের? অনেকবার জানতে গিয়েও উত্তর পায়নি অলি।

    ভালোবাসা তো নিয়ম মানে না। কিন্তু মোহ বলেই শিমুলের সমাজকে ভয়।পারেনি তার পরিবারকে বলতে অলির কথা।নিজের নিয়ম মাফিক জীবনে ব্যতয় ঘটাতে সে চায় না। উল্টো অলির ঘর ছেড়ে আসাকে অলির নিজের সিদ্ধান্ত বলে দায় এড়িয়ে যায়।

    এখন যে অলির আবার সে ঘরে ফিরেও যাবার পথ নেই। আবার সামনের দিনগুলোতে সন্তানকে নিয়ে কি করবে এমন ভাবনাতে দিশেহারা।

    স্বামীর অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে গিয়ে শিমুলের প্রতি আবেগের নির্ভরতা তার ভুল। আর সে এটা করেছে তার জীবন বোধের অজ্ঞতা থেকে। এর জন্য সব দিকে আজ সে পরিত্যাক্ততা। স্বামী শিমুল কেউই নিজেদের গন্ডীর বাইরে গিয়ে বুঝতে চাইনি অলিকে।তাই মনে হয় চির বিদায়ে বোধ হয় মুক্তি। কিন্তু অলির মত এ সমাজের অনেক মেয়ের এমন ভাবনাটা ভুল।

    জীবনটা হলো সাদা কাগজ।।এখানে ভুল লেখাগুলোকে শুধরে নিতে হবে নিজেকে। সামনের দিকে এগিয়ে যাবার নামই জীবন। নারী বলে চার দেয়ালের বাইরে তার জীবন সত্তা থাকবে না তা কিন্তু নয়।

    প্রেম ভালোবাসা আবেগ জীবনকে কেবল পরাজিত হতে শিখায় না। বরং কখনও কখনও আবেগের কাছে থেকেই জীবনবোধের ধারনা আসে নতুন আংগিকে।

    স্বামী সন্তান কিংবা শিমুলের জন্য এ জীবন শুধু তা কিন্তু নয়। মুক্ত আকাশে প্রান খুলে শ্বাস নিতে হলে নিজেকে ভালোবাসতে হবে। আর কেউ তাকে পরিত্যাগ করছে তেমন ভাবনাকে দূর করে দিতে হবে । বরং সং সাজা সে পুরুষদেরকে নিজে পরিত্যাগ করতে হবে।

    জীবনের বাঁকে বাঁকে শিমুলের মত কত মিথ্যা মোহের হাতছানি থাকে। সে মিথ্যা মোহকে সরিয়ে আপন সত্তায় বিকশিত হলেই অলিরা খুঁজে পায় জীবনের মর্মাথ।

    অলি, একবার শুধু একবার নিজের জন্য বাঁচো।তোমার ঘরের চাবি যে তোমাকেই ভাংগতে হবে নিজের আলোয় আলোকিত হয়ে।









Comments

0 comments