#me too


  • #Me Too নারীর না বলা কথা আর প্রতিবাদে মৌনতা নরকূলের।
    - হাসিনা আকতার নিগার
    লেখক- কলামিস্ট

    সাম্প্রতিক সময়ে ঝড় তুলেছে Me Too। যা নিয়ে ভারত সহ বেশ কিছু দেশ মিডিয়া তোলপাড়। এর হালকা হাওয়া এসে লেগেছে বাংলাদেশে । যার প্রথম ধাক্কাটা লেগেছে গন মাধ্যমে। ফেইসবুকে সাংবাদিকদের সরবতা নীরবতা নিয়ে চলছে তর্ক বির্তক। অনেক মনে করে নারীদের Me Too প্রতিবাদ বাংলাদেশে তেমন ভাবে সাড়া পড়বে না। এর অন্তরালের কারনগুলো ব্যাখ্যা দেবার আগে যে বিষয়টা দেখা যায় তা হলো - সামাজিক অবস্থান গত কারনে প্রতিবাদের সাহস করে উঠা ব্যক্তির সংখ্যা কম। আবার যে নারীরা নিজের কথা বলে প্রতিবাদ করতে পারে সে নারীদের সাহসিকতার জন্য সকল নারী গর্বিত। কারন যৌন হয়রানি বা নির্যাতন নারীর নিত্য জীবনে আশংকা হয়ে থাকে প্রতিনিয়ত।

    একজন মেয়ে ঘরে যখন হয়রানি বা নির্যাতিত হয় তখন সেখানে চলে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা। কারন মেয়ের জীবনের দুঃসহ ঘটনার কথা বললে যে নিজেরাই হেয় হবে। আবার নারী যখন পরিনত বয়সে জীবনের তাগিদে বাইরের জগতে পা দেয় সেখানে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হয় শারীরিক ও মানসিক ভাবে। আর এ অবান্থিত ঘটনাগুলো হয়ত সারা জীবন নিজে বয়ে বেড়ায় নীরবে নিঃশব্দে।

    কর্মক্ষেত্রে নারীরা যে সরাসরি বা আকার ইংগিতে যৌন হয়রানির শিকার হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এক্ষেত্রে যদি নারী পুরুষের উভয়ের সম্মতিতে কোন সম্পর্ক হয় তা নিয়ে কেউ কাউকে ব্ল্যাকমেইল করাটা ভুল।

    কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি অনেক ক্ষেত্রে প্রজ্ঞা মেধা থাকা সত্ত্বেও নিজেকে বিকিয়ে দিয়ে যোগ্যতার প্রমান দিতে হয় নারীকে। আর তাই জীবিকার প্রয়োজনে অফিসের কর্তাবক্তিদের খেয়াল খুশির কাছে হার মানে নারী । যা তার সারা জীবনের বোবা কান্না হয়।চাইলেও পারে না প্রতিবাদ করতে। কারণ পরিবার, সন্তান সমাজ আর সম্মান তাকে করে বাকরুদ্ধ।

    সুন্দর চলন বলনের ভদ্রবেশী মুখোশের আড়ালের বিকৃত মানসিকতার পুরুষের সংখ্যা এ সমাজে কম নয়। এরা নানা সেক্টরে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। এসব ব্যক্তিদের বর্জন করতে হলে সবার আগে নারীর আর্থিক নিরাপত্তা দরকার। কিন্তু নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত করবার মত অবস্থা সবার হয় না। যার ফলে নারীকে যাপিত জীবনে পুরুষের বিকৃত মানসিকতার ক্ষত একা বয়ে বেড়াতে হয় আজীবন মানসিকভাবে।

    Me Too তে নিজের না বলা কথা বলার দুঃসাহসী সে নারীদের সাহসিকতা সাধুবাদ যোগ্য নিঃসন্দেহে। তবে এখানে লক্ষ্যনীয় যে, মিডিয়াতে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের ঘটনাগুলি যত বেশি প্রকাশ পাচ্ছে অন্য সেক্টরের একেবারেই নির্বাক। বাস্তবতার নিরিখে দেখা যায়, মিডিয়া জগতের মত শত শত ঘটনা রয়েছে অন্যান্য সেক্টরে কর্মরত নারীদের।

    আবার কর্মক্ষেত্রের বাইরে ভিন্ন চিত্র রয়েছে ঘরে। পরিবারের কন্যা শিশু টি বড় হবার সাথে তাকে নিয়ে বিব্রতকর ঘটনার শিকারের শংকায় থাকে মা বাবা। আর মেয়েটি মা বাবার আড়ালে ঘটে যাও কোন স্পর্শ কাতর বিষয় বলতে পারে না কাউকে। কারন ভয় লজ্জা তার ভেতর এক ধ্রমুজাল তৈরি করে। সাথে সাথে মেয়েটির মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে বাধা হয় পুরুষের এ বিকৃত আচরন। পুরুষ বিদ্ধেষী মনোভাবের সূত্রপাত ঘটে। যা হয়ত বুঝতে পারে না মা বাবা।

    এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে বলা যায়, Me Too কেবল যে নারীর প্রতিবাদের ভাষা তা নয়। একজন কন্যার বাবা হিসাবে নারীর প্রতি যৌন হয়রানির প্রতিবাদে পুরুষদের মৌনতা অবলম্বন কি ঠিক ?

    শারীরিক কামনা বাসনা প্রকৃতিগত ভাবে নারী পুরুষ সবার আছে। যা মিটাতে সামাজিক আচার বিধি পাশাপাশি নিজের বিবেক বোধকে বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। বিকৃত যৌন রুচির পুরুষরা ভুলে যায় উচিত অনুচিত।

    কিন্তু একজন পুরুষ যখন পিতা হয়ে বুঝতে বা জানতে পারে তার মেয়েটি যৌন হয়রানির শিকার তখন পুরুষ নয় বাবা হিসাবে বিবেকের কাছে অপরাধী হয়ে অসহায়ত্ব বোধ করে সে ।

    সুতরাং নিজের কু - রিপুকে সংযত না করে যে পুরুষ বিকৃত যৌন লাল সার পরিতৃপ্তি পেতে চায় সে অমানুষ। তার বিচার মানুষের কাঠগড়ায় হলেও একজন নারী ভুলে যেতে পারে না সে দুঃসময়ের কথা। আর নারীকে নিয়ে বির্তকও থেমে যায় না সমাজে।

    অতএব নরকূল, নারীদের যৌন হয়রানি বা নির্যাতন করার সময় নিজের কন্যা স্ত্রী বোনকে মনে করুন। আর ভাবুন আপনি পুরুষ হিসাবে যা করছেন তা যদি এদের বেলায় ঘটে সেটা অন্যায় হলে আপনারটা কি করে ন্যায় হবে?

    সুতরাং Me Too কেবল নারীদের প্রতিবাদ নয়। Me Too হোক কন্যা সন্তানের জন্য পুরুষদের ও প্রতিবাদ । তবেই সমাজে আমাদের কন্যারা পাবে নিরাপত্তা আর দূর হবে যৌন হয়রানির শংকিত জীবন।