mom smile


  • ছেলের জয়ে মা জয়ী

    সবার জীবনের গল্পটা নিয়ম মত হয় না। বাবা মায়ের আদুরে মেয়ে বন্যা একদিন ভালোবেসে ঘর বাঁধলেও সংসার করা হয়নি। ১২ বছর মানিয়ে নিতে চেষ্টা করেছিল। কিন্ত হয়নি।তাই ৫ বছরের ছোট ছেলে সমুদ্রকে নিয়ে বের হয়ে আসে সংসার জীবন থেকে।
    সংসার ছেড়ে একা পথ চলতে গিয়ে হয়েছিল অনেক বাধার সম্মুখীন। ডির্ভোসী নারীদের এ সমাজে বাঁকা চোখে দেখা যেন প্রথা হয়ে গেছে।আর লোভাতুর চাহনি নিত্য দিনের সমস্য্য। এসব যন্ত্রণার সাথে লড়াই করার জন্য বন্যার শক্তি ছিল তার ছেলে সমুদ্র। তাই আজ নিজের অবস্থানে দাঁড়িয়ে নিজেকে নিয়ে ভাবলে মনে হয় সুখের স্মৃতিগুলো কেবল তাদের মা - ছেলের। আর সে সাথে জীবনের হিসাবটা মেলাতে গিয়ে 'মা' শব্দটা নিয়ে অহংকার হয়। আর হবেই না বা কেন। সমুদ্র যে মাকে তার মেধা শ্রম দিয়ে বিজয়ীনি করেছে। বিদেশের মাটিতে সমুদ্রের সফলতা দেখে বন্যা সুখের কান্নাতে ভেসে যায়।
    অনেক কষ্টের মাঝেও বন্যা তার জীবনের স্বপ্নগুলো কখনো হারিয়ে যেতে দেইনি। এ ছোট ছেলেটার হাত ধরে ১৮ বছর আগে একা লড়াই শুরু করেছিল। তখন মনের ডায়েরিতে ছিল একটিই কথা ' সব পরিচয় ছাড়িয়ে সবার আগে আমি মা। আর ছেলেকে মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে হবে তার আত্মপরিচয় দিয়ে। '
    ছোট একটি নারী বিষয়ক সংস্থাতে কাজ আর ছেলেকে ভালো পরিবেশ দিবার চেষ্টা ছিল সারা সময় । তবে সব কিছুতে ছেলে ছিল তার বড় বন্ধু। সমুদ্র কেজি ওয়ান থেকে শিখেছে মানুষকে চেষ্টা দিয়েই জীবনকে জয় করতে হয়।

    জীবন খাতার হিসাবটা নতুন করে লিখতে হলে কিছু আবেগী হিসাব বন্ধ করতে হয়। বন্যাই ছেলের মা-বাবা, বন্ধু হয়ে অফিসটাকে আরেক সন্তানের মত বড় করতে লাগলো। সমাজের নানা বিষয় নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি দেশের জন্য কিছু করার চেষ্টা ছিল বন্যার সব সময় । দেশ প্রেমের সে দায়ভার থেকে এ দেশের নারীদের নিয়ে কাজ করাকে সে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান কাজ বলে মনে করছে।
    কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে চেনা জানার পরিধিতে বন্যার আত্মপরিচয়কে এখন আরও সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে ছেলের সফলতার প্রাপ্তিগুলো।
    সমুদ্র ছোট বেলা থেকে পড়াশোনাতে খুব ভালো ছিল। আর সে সাথে মায়ের স্বপ্ন ইচ্ছাকে চিন্তায় রেখে সে এগিয়েছে আগামীর পথে। ব্রোকেন ফ্যামিলিতে সন্তানদের নিয়ে থাকে ভয় শংকা। আর সে কারনে মা হিসাবে নিজের অবস্থানটাকে সন্তানের কাছে স্বচ্ছভাবে উপস্থাপন করা খুব প্রয়োজন বলে বন্যা মনে করে।
    কাজ আর সন্তানের মাঝে যে জীবন বন্যা পেয়েছে তার জন্য সে নিজেকে সত্যি সৌভাগ্যবতী বলে মনে করে। বিধাতা হয়ত সে কারনে তার সংসারটা তাকে অন্যভাবে ফিরেয়ে দিয়েছে। বন্যার সংসার হলো মা ছেলের সংসার।
    সমুদ্র সর্ব্বোচ নাম্বার নিয়ে ও -লেভেল এ -লেভেল পাশ করে। তারপর বৃত্তি নিয়ে আমেরিকাতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চলে যায়। বিদেশে পড়ার ইচ্ছা ছিল সমুদ্রের আর সেক্ষেত্রে বন্যা বলেছিল স্কলারশিপ পেলেই বিদেশ যেতে পারবে। না হলে নয়। সমুদ্র মায়ের কথা মতই কাজ করেছে। সেখানেও তার অভাবনীয় সাফল্য ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি জব করেছে প্রথম থেকেই সমুদ্র।
    বন্যা সব সময় ছেলেকে বলত,' কারো পরিচয়ে নয়, নিজের পরিচয়ে ভালো মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।' সফলতার ধারাবাহিকতাতে সমুদ্রের প্রতি শুধু মায়ের নয় তার টিচারদের ও অন্য রকম প্রত্যাশা ছিল সব সময়।
    সমুদ্র মা বন্যার সব স্বপ্ন আর শিক্ষাকে লালন করে জীবনে কোথাও ফাস্ট ছাড়া সেকেন্ড হয়নি ।
    ২২বছর আগে বন্যার কোল জুড়ে আসা সমুদ্রকে অনেক কিছু দিতে পারিনি শৈশব কৈশোরে। সে কষ্টটা তার দহন।
    যার জন্য ছেলেকে বলত,' বিত্ত বিলাস কিছু আমি দিতে পারবো না এ হিসাবি জীবনে। কিন্তু তোমার প্রতি দায়িত্ব পালনে লড়াইটা আমি করব বাবা। সম্পদ দেবার ক্ষমতা আমার নাই।কিন্তু তোমাকে মানুষ করতে না পারলে জবাব দিতে হবে যে নিজেকে।'
    অর্থের আধিক্যতা নেই বলে ছেলের কোন কনভেকেশনে আজও বন্যার যাও হয়নি। ভিডিও দেখে আর আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করে।
    বাস্তব জীবনে ছেলে তার আর্দশ নীতিকে সাথী করে ভালো মানুষ হতে চেষ্টা করছে এর চেয়ে আর বড় কি আছে। আর সে কারনে বন্যা নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি হিসাবে পরিচয় দেবার চেয়ে অনেক বেশি গর্ববোধ করে সমুদ্রের মা হিসাবে পরিচয় দিতে। একজন নারী হিসাবে তাই সে বলে
    " কন্যা জায়া জননী-
    কোন পরিচয়ে তুমি গরবিনী?
    বলবো আমি - জননী।''
    আর আমার এ জীবন কথন যদি একা কোনো মায়ের জন্য প্রেরণার শক্তি হয় তবে জানবো, পেরেছি নারী হয়ে লড়াই করতে। আর কারো চোখে জল এলে বলবো- আমি তো আমার গল্প বলেছি, তুমি কেন কাঁদলে?'