Hormon Problem


  • নারীদের হরমোনের সমস্যা ও সাবধানতা
    হাসিনা আকতার নিগার

    আমাদের দেশে অনেক নারীই হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারনে নানা রোগে ভুগছেন। কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই তারা এই বিষয়টি সর্ম্পকে জানেন না। মেয়েদের হরমোনের ভারসাম্যহীনতার প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- গলার স্বর মোটা হয়ে যাওয়া, থুতনি, মুখমন্ডল, ঠোঁটের উপরের অংশে, বুক-স্তন বৃন্তের চারপাশ, পায়ে এবং তলপেটের বড় বড় লোম হওয়া, ব্রনের সমস্যা, শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় ঘাড় বেশী প্রশস্ত হয়ে যাওয়া, সর্বপরি শরীরে পুরুষালি ভাব চলে আসা, মাসিক অনিয়মিত হওয়া। কিন্তু মেয়েরা এই উপসর্গগুলোকে কোন স্বাস্থ্যগত সমস্যা বলে মনে করে না। তাই এসব সমস্যা দূরীকরণে তারা চিকিৎসকের শরানাপন্ন না হয়ে বরং বিউটি এক্সপার্টদের দ্বারস্থ হন। এতে স্বল্পসময়ের জন্য অসুবিধা থেকে মুক্তি পেলেও শরীরের ভেতরে সমস্যা থেকেই যায়। যা পরবর্তীকালে জরায়ুর টিউমার, ক্যান্সার সহ বড় যে কোন রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

    ডিম্বাশয় যখন স্ত্রী হরমোনের (ইস্ট্রোজেন) থেকে পুং হরমোন (প্রজেস্টেরন) বেশী তৈরি করে তখন এই সমস্যাগুলো দেখা দেয়। অনেক নারীই শুধু অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা ও ব্যথা নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়। এক্ষেত্রে রক্তে ও হরমোনের কিছু নির্দিষ্ট পরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ইনসুলিন পরীক্ষা করে যদি দেখা যায় মেয়েটি হরমোনের ভারসাম্যহীনতায় ভুগছে তখন তাকে মাসিক নিয়মিত করা সহ হরমোনের চিকিৎসা দেয়া হয়।

    হরমোনের চিকিৎসা নিয়ে সমাজে নানা ধরনের ভীতি আছে। অনেক অভিভাবক মনে করেন, এই সমস্যা থাকলে মেয়েকে দ্রুত বিয়ে দিতে হবে নয়তো পরে আর সন্তান হবে না। মানুষের এই ধারনাটা সম্পূর্ণ ভুল। হরমোনের পরিবর্তনের ফলে ডিম্ব স্ফোটনে সমস্যা হয় বলে সন্তান হতে সমস্যা হয়। কিন্তু হরমোনের সমস্যা যেমন আছে, তার চিকিৎসাও আমাদের দেশে আছে। এজন্য উদ্বিগ্ন না হয়ে সুষ্ঠু চিকিৎসা নিতে হবে।
    এসব ক্ষেত্রে যাদের বিয়ে হয়নি তাদের এক ধরনের চিকিৎসা দেয়া হয় আর যাদের বিয়ে হয়েছে এবং সন্তান নিতে চান তাদের হরমোনের চিকিৎসার পাশাপাশি তারা যেন সন্তান নিতে পারেন সেই চিকিৎসাও দেয়া হয়। এই চিকিৎসার ফলাফলও ভালো। হরমোনের চক্রাকারে পরিবর্তন, মস্তিষ্কের সেরোটোনিন নামের হরমোনের অপর্যাপ্ততার কারনেও মেয়েদের মাসিক পূর্ব সিনড্রোম যেমন: মাথা ব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা, খিদে না পাওয়া, বমি বমিভাব, স্তন ফুলে যাওয়া, অল্পতেই অবসাদ অনুভব করা, ঘুমের সমস্যা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গগুলো দেখা দেয়।

    আবার হরমোনের সমস্যা যাদের আছে তাদের হৃদরোগ, ডায়াবেটিস হবারও আশঙ্কাও থাকে। তাছাড়া এই চিকিৎসা দীর্ঘ সময় ধরে চালিয়ে যেতে হয় বলে ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় অনেক সময় জরায়ুতে টিউমার এবং ক্যন্সারের আশঙ্কাও থেকে যায়।

    হরমোনের সমস্যা যাদের আছে তাদের ওজন কোনভাবেই বাড়তে দেয়া যাবে না। শরীরে ইনসুলিনের তারতম্য থাকলে তাও নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে। এজন্য অবশ্যই উচ্চতার অনুযায়ী ওজন ঠিক রাখতে হবে। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ নিয়মিত ব্যয়াম, হাঁটা, সাঁতার কাটাতে হবে। চিকিৎসকের পরার্মশ মতো চলতে হবে এবং সর্বোপরি রোগ নিয়ে অহেতুক উদ্বিগ্ন না থেকে শারীরিকভাবে সুস্থ ও দুশ্চিন্তামুক্ত, সজীব জীবনযাপন করতে হবে।

    শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকলে অনেক সময় মাসিক নিয়মিত হয়ে যায়। হরমোনের চিকিৎসা গ্রহণের পাশাপাশি বড় বড় লোম থাকলে ব্লিচ, আপার ও লোয়ার লিপ থ্রেডিং, কসমেটিক থেরাপি, লেজার চিকিৎসা নেয়া যায়। তবে অবশ্যই আগে রোগের চিকিৎসা নিতে হবে।

    অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস মেলিটাস, কুশিং সিনড্রোম, থাইরয়েডের সমস্যা থাকলেও সাধারনত ডিম্বস্ফোটনে সমস্যা থাকে এবং মাসিক অনিয়মিত হয়। এছাড়া মূত্রগ্রন্থি, পিটুইটারী গ্রন্থি এবং ডিম্বাশয়ে টিউমার হলে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে। মোট কথা, কোন মেয়ের মাসিক অনিয়মিত থাকলে তা অবহেলা না করে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পন্ন করতে হবে। অন্যথায় দেখা যায়, অনিয়মিত মাসিকই পরবর্তীকালে বড় কোন রোগের কারন হয়ে দেখা দিতে পারে।

Comments

0 comments