প্রতীক্ষার হলো অবসান


  • প্রতীক্ষার হলো অবসান
    হাসিনা আকতার নিগার

    সানাইয়ের সুরে পরী আর প্রভাত তাদের যুগল জীবন শুরু করেনি। অতি সাদামাটা আয়োজনে আজ দুজন দুজনার হচ্ছে। কতটা প্রতীক্ষা ছিল এ দিনটার জন্য তাদের তা কেউ জানে না।
    হারিয়ে যাও প্রেমকে ফিরে পাবে সে আশাই ছিল না প্রভাত পরীর।নাই বা হলো বর বধুর সাজ। তবু আজ তারা নিজেদের অন্য দিন থেকে একটু আলাদা ভাবে সাজিয়েছে। দুজনে পরেছে দুজনের পছন্দের রং য়ের পোশাক।
    প্রভাতের দেয়া লাল কাতান শাড়িতে নিজেকে সাজিয়ে ড্রেসিংটেবিলের আয়নাতে দেখেই লজ্জা পায় পরী। কিন্তু এ দিনটার জন্য কত প্রতীক্ষা। এখনো মনে ভয়, সত্যি কি বাকি জীবন এক সাথে কাটাবে তারা?

    অতীতের সেদিনগুলি মনে হয়ে যায় পরীর। প্রভাত তার পরিবারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের ভালোবাসাকে দমন করে পরীকে সরিয়ে দিয়েছিল জীবন থেকে। আর ৫ বছর আগে প্রভাতকে পরী বলেছিল-
    ' প্রতীক্ষা রবে সারা জীবন। যদি সব কাজ শেষে মনে হয় পরীকে তার প্রয়োজন তবে সে আসবে। '
    কত ভাবে প্রভাতকে বুঝিয়েছিল সেদিন পরী। দুজন মিলে জীবনের পথ চলতে। কিন্ত প্রভাত রাজী হয়নি পরীকে নিজের জীবনে জড়াতে।
    আজ প্রভাত একা। তার ভাই বোন সবাই নিজেদের নিয়ে এতই ব্যস্ত যে প্রভাতের জন্য চিন্তা করার মত সময় তাদের নেই। তবু প্রভাত চায় তারা ভালো থাকুক। সবাই বিদেশে তারা।প্রভাত একাই নিজের বাড়িতে।

    পরী তার কষ্টকে গোপন করে প্রভাতের ছায়া সংগী হয়ে ছিল সব সময়। দেখেছে প্রভাত সংসারের জন্য কত পরিশ্রম করেছে। হয়তবা একদিন বুঝবে প্রভাতের ভাই বোন, তাদের ভাই নিজেকে কতটা বির্সজন দিয়েছে তাদের জন্য। তবে পরী মনে মনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ' জীবনের বাকিটা সময় ভালোবাসার বাঁধনে কাটাবে তারা। কোন জটিলতা দিয়ে নিজেদের আর হারাতে চায় না। '
    ও মা কখন থেকেই ফোনটা বেজে যাচ্ছে। পরী ভাবনার জগতে ডুবে গিয়ে টেরই পায়নি। ১০ টা মিস কলড প্রভাতের। ইস আজকের দিনেও কি ফোন নিয়ে ঝগড়া হবে।
    আবার রিং হতেই পরী ফোন ধরতেই প্রভাত বলে
    - বিষয় কি এত কি করছো যে ফোনটা ধরতে পারছো না।
    - প্লিজ প্রভাত আজ রাগ করো না। আসলে খেয়াল করিনি। কিন্তু এত কল কেন। আমি সময় মত কাজী অফিস যাবো।
    - জি না ম্যাডাম। আমি জানি তুমি লেট করবে না। কথা ছিল রেডি হয়ে ছবি পাঠাবে। পরীকে লাল শাড়িতে কেমন লাগছে দেখব না আমি।
    - প্রভাত! একটু পর তো দেখবেই। আবার কি ছবি দিবো।
    - প্লিজ পরী একটা ছবি। তুমি জানো কত সময় অপেক্ষা করছি।
    -জানি প্রভাত অপেক্ষা নয় ৫ বছরের প্রতীক্ষা আজকের এ সাজের জন্য।
    - পরী সে প্রতীক্ষার জন্য আবারও ক্ষমা চাইছি।আর ছবিটা দাও প্লিজ। রাখছি। আমাদের বাস কিন্তু ৪ টায়।

    ফোন রেখে ছবি তুলতে ভীষণ লজ্জা লাগছিল পরীর। কোন রকম একটা ছবি পাঠিয়ে দিয়ে নিজের লাগেজটা আর বাকি সব দেখছিল ।

    পরীর এক বোন ছাড়া আপন তেমন কেউ নেই। তাই বোনের পরিবার আর কজন বন্ধুদের নিয়ে প্রভাত পরীর বিয়ের অনুষ্ঠান। রেজিষ্ট্রী করে বিয়ে আর সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া। এরপর দুজন চলে যাবে কক্সবাজার।

    লাগেজ ঠিক করতে করতেই বন্ধুরা এসে গেল। সবাই পরীকে দেখে বেশ প্রশংসা করছে। এর মাঝে ফোনে মেসেজ " আমার পরী।"

    পরীর হাসিতে সবাই বুঝলো এটা প্রভাতের মেসেজ। আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পরী বললো
    - চল এবার।আমাদের লেট হলে প্রভাত বাবু ক্ষেপে যাবে।
    বিষাদে ছেয়ে যাওয়া দুটি জীবনে আবার নতুন প্রান যেন ফিরে এলো । পরী প্রভাতের ভালোবাসার দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো আজ। নব দম্পতিকে কক্সবাজারের বাসে তুলে দিয়ে নব জীবনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বন্ধুরা বিদায় নিলো। প্রভাত পরীর হাতে হাত রেখে শুধু বললো
    -এ হাত ছেড়ে যেও না কোনদিন।
    পরী টলমল চোখে তাকিয়ে বললো
    - ছেড়ে তো যাইনি কোনদিন। যাবো ও না বাকী জীবন।


Comments

0 comments