mother in law


  • শাশুড়ি মা
    হাসিনা আকতার নিগার

    এই টেলিফোন যন্ত্রটা বিহীন যদি জীবন হতো কত ভালো কাটত দিন। কিন্তু উপায় নেই ধরতেই হবে ফোন। না হলে মায়ের ফোন করা থামবে না। রাত জেগে একটু ঘুম এলো নিতুর ভোরে।

    ফোন তুলতেই মায়ের সেই একথা -
    নিতু তুই কি শ্বশুর বাড়ি গিয়েও এমন করবি। কটা বাজে জানিস।
    নিতু - মা তুমি কি গো। আজ ছুটির দিন। একটু ঘুমাতে দাও প্লিজ। পরে কথা বলি রাগ করো না।রাখি।
    আর ঘুম এলো না। আর কদিন বাদে নিতুর বিয়ে। মায়ের বান্ধবীর ছেলে শুভর সাথে । না একেবারে পারিবারিকভাবে সম্পর্কের বিয়ে। তবে শুভকে ভাই থেকে নিজের বর ভাবতেই কেমন জানি আড়ষ্টতা লাগছে।

    আর মনি মাকে ৭ দিন পর বলতে হবে শাশুড়ি মা। শাশুড়ি হবার পর কি বদলে যাবে মনি মা? কিন্তু উনি তো বরাবর মায়ের বকা থেকে উদ্ধার করেছে ছোট বেলা থেকে। ভয় হয় অফিসের বিবাহিত আপাদের কাছে শাশুড়িদের কথা শুনে। ইস মা সকাল বেলাতেই শ্বশুর বাড়ির কথা বলে ঘুমটা নষ্ট করে দিলো।

    বিয়ের আগে এটাই নিতুর অফিসের শেষ ট্যুর। এখান থেকেই সোজা বাড়ি চলে যাবে। ১৫ দিনের ছুটি নিয়েছে বিয়ের জন্য। হবু বর শুভ ও তাই করেছে। নিতু মনে মনে ভাবছিল মনি মায়ের সাথে কি কথা বলবে। হয়ত আলাপে বুঝবে মনি মা কি শাশুড়ি মা হয়ে কথা বলে কিনা। কিন্তু এ কথা শুনলে মা ক্ষেপে যাবে।
    এসব ভাবতে ভাবতে নাস্তার টেবিলে মোবাইলটা বেজে উঠে। স্ক্রীনে নামটা দেখেই মনে হলো, আরে এ যে মেঘ না চাইতে জল। তড়িঘড়ি করেই ফোন ধরে নিতু বলে উঠে
    - মনি মা আমি তোমাকেই ফোন করতাম।
    মনি মা কথাটা শুনে একটু ধমকের সুরে বলে
    - এই মেয়ে আমি তোর এখন শুধু মনি মা না। শাশুড়ি মা বলবি । সত্যি সুচি ঠিকই বলে তোর কিছু মনে থাকে না।
    - সরি মণি মা। মনে রাখবো। কোন কাজে ফোন করেছো
    - হ্যাঁ তুই আজ আসবি কিনা তা জানতে। কেনাকাটা করব যে তোকে নিয়ে।

    নিতু কথাটা শুনে ভাবলো, না মনি মা শাশুড়ি হয়নি এখনো। আগের মতই আছে।
    - আচ্ছা মনি মা তোমাকে আমি একটা কথা বলতে পারি, এটা বলতেই উনি বলে
    - নিতু সব প্রশ্নের উত্তর এখন দেয়া যাবে না। আমার বৌমার জন্য কিছু জমা থাক।আর ৭ দিন পর জানবি নিজেই। সাবধানে আসিস। রাখছি ফোন।
    আহা সেই টেনশনে রেখে দিলো মনি মা। কি আর করা। অপেক্ষা ছাড়া কোন উপায় নাই।
    ***********
    সব আয়োজন শেষে মায়ের ঘর থেকে বিদায় নিয়ে শুভ নিতু বর বধূ বেশে দাঁড়িয়ে আছে ফুল দিয়ে সাজানো শুভদের ঘরের দরজায়। কিন্তু কি নিয়ম। আজ নিতু মনি মা, মনি মা বলে চিৎকার করে ঘরে যেতে পারছে না। শাশুড়ি বরন ডালা নিয়ে বধু বরন করবে। তারপরই হবে গৃহ প্রবেশ। মা পই পই করে শিখিয়েছে শ্বশুর বাড়ির সব নিয়ম আচার।

    বধু বরন করছে আর মনি বার বার দেখছে নিতুকে। মেয়েটার টেনশন দেখে হাসিও পাচ্ছে। সব নিয়ম শেষ করে মনি বলে - বাবা শুভ এবার ঘরে আয় আমার বৌমাকে নিয়ে। তবে মনে রাখিস নিতু এ ঘরের বউ হবার আগে আমার মেয়ে কিন্তু। আর এমন কিছু কেউ করবে না যাতে আমার নিতু কষ্ট পায়।

    ঘরে ঢুকেই নিতু শুভ মনি মাকে সালাম করতেই ছেলে আর বৌমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে। নিতুকে বলে -
    কি রে পাগলী ভেবেছিলি তোর মনি মা পালটে গিয়ে জাঁদরেল শাশুড়ি মা হয়ে যাবে তোর। পেলি তো কথার উত্তর। শোন আমার শাশুড়ি কোনদিন আমাকে বুঝতে দেয়নি আমি অন্য ঘরের মেয়ে। তুইতো সুচির মেয়ে না শুধু আমার ও মেয়ে।

    কথাটা শুনতেই নিতু সেই ছোট বেলার মত মনি মাকে জড়িয়ে বলে - মনি মা তুমি আমাকে আগলে রেখো সারা জীবন তোমার ঘরে। আর কিছু চাই না। তুমি যে আমার মনি মা তারপর শাশুড়ি মা।