একুশ শতকেও নারী অবরুদ্ধ

  • একুশ শতকেও নারী অবরুদ্ধ?
    হাসিনা আকতার নিগার

    রাতের আকাশটা আজ বড় বেশি অন্ধকার। ঘোর অমাবস্যার মতই বিষাদে ছেয়ে আছে রুবার মন। ঘরের সব আলো নিভিয়ে বসে বসে ভাবছে তার প্রতিবাদী সংগ্রামী মা তাকে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করেছে। আর সে কারনে রুবা ৩ দিন ধরে ঘরে বসে আছে। দুপুর বেলা বলেছিল বৈশাখের শাড়ি কিনতে মায়ের সাথে শপিংয়ে যেতে। রুবা যাবে না বলাতে মাও যায়নি।

    সেই থেকে রুবা ভাবছে এবারের বৈশাখে এত লাল সাদার সাজের মাঝে কি কারো মনে হবে না আগুনে পোড়া সে নুসরাত মেয়েটির কথা। তার শরীরের লাল রক্ত ক্ষরন কি ম্লান করে দিবে না বর্ষবরণকে।

    নুসরাতের অপরাধ সে তার শরীরটাকে ভোগ করতে দেয়নি। প্রতিবাদ করেছে পিশাচের বিরুদ্ধে। আর তাই নুসরাতকে পুড়িয়ে দিতে চেয়েছিল নরপশুরা। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে রুবার চোখে জল গড়িয়ে পড়ে।

    তখনি ঘরের আলো জ্বলতেই রুবা বলে উঠে প্লিজ লাইটটা নিভাও মা। সে জানে তার ঘরে মা ছাড়া আর কেউ আসবে না এসময়। রুবার মা রোকেয়া কিছু না বলে মেয়ের পাশে বসে মাথায় হাত রাখে। অমনি রুবার কান্না যেন বাধা মানতে চাইল না। মেয়েকে রোকেয়া সাত্ত্বনা দেবার চেষ্টা করে। রুবা শুধু বলে, ' মা তুমি না দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলে আর আমাদের শিখিয়েছ অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে। তাহলে এখন কেন তুমি আমাকে বলছো নারীদের প্রতি অন্যায়ের প্রতিবাদে না যেতে। '

    মেয়ের কথার উত্তর দিতে গিয়ে রোকেয়ার মাথা হেঁট হয়ে আসছে। কিন্তু কি করবে উনি যে মা। সন্তানের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত হয়।।নুসরাত তনু রূপার মত রুবার কিছু হোক তা মা হয়ে কি করে চাইবে।

    রুবা পড়াশোনার পাশাপাশি নারীদের জন্য কাজ করে। ৩/৪ দিন আগে এক অচেনা ব্যক্তি ফোন করে রুবার মাকে বলেছে মেয়েকে সামলাতে। তা না হলে এমন কিছু ঘটবে তাতে সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না। বিষয়টা রুবাকে এখনো জানায়নি রোকেয়া। একজন যোদ্ধা প্রতিবাদী মানুষ হয়েও মেয়েকে ঘর থেকে বের হতে দিতে সাহস পাচ্ছে না ফোনটা পাবার পর থেকে। এই একুশ শতকে এসেও নারীরা অবরুদ্ধ এ কথাটা রোকেয়াকেও ভাবাচ্ছে।

    কিছুটা সময় নিয়ে রোকেয়া রুবাকে বললেন - 'তুই আমাকে দেখে অবাক হবারই কথা। ৭১ 'এ নারীদের প্রতি অত্যাচারের সে স্মৃতি ভুলতে পারিনি। কিন্তু এখন মনে হয় ৭১ এর হায়নাদের চেয়ে কম জঘন্য নয় এ সময় যারা নারীদের প্রতি অত্যাচার করে। এ জন্য কি সেদিন লড়াই করেছিলাম আমরা। কষ্ট লাগে এসব দেখে। কিন্তু সব ছাড়িয়ে আমি যে মা। তোর কিছু হলে আমি তা সইতে পারব না। মা কে যখন কেউ হুমকি দেয় সন্তানের জীবন নষ্টের তখন কেমন লাগে তুই বুঝবি না। '

    রুবাকে হুমকির কথাটা রোকেয়া জানায়। কথাটা শুনে রুবা বলে, ' মা তুমি কি এসব কীটদের কাছে পরাজিত হয়ে যাচ্ছো না? নিজের মেয়ের কথাটা ভাবলে শুধু। তাহলে কি মেয়েরা এ সমাজে নানা কারনে এভাবেই অবরুদ্ধ হবে? '

    একজন মানুষ হিসাবে সমাজে নারী তার অধিকার পেতে হলে লড়াইটা করতে হবে। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসাবে চিন্তা করার মানসিকতা পরির্বতন হচ্ছে না। সে কারনেই কমছে না নারী প্রতি অত্যাচার। নারীকে অবরুদ্ধ করার পায়ঁতারাকে বুঝতে হবে কন্যা জায়া জননীকে।

    রুবার এ কথাগুলোকে রোকেয়া সর্মথন করে। তাই নিজের মনের সংশয়কে দূর করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে বলে -'রুবা তোর মা তোর সাথে আছে।'

Comments

0 comments