make up.- lipstick

  • আগুন রাঙা ঠোঁট

    নারীর রাঙা ঠোঁটের গল্পটা একেবারে নতুন নয়। সেই আদ্যিকাল থেকে আধুনিক যুগ সবসময়েই পুরুষের প্রিয় নারীর রাঙা ঠোঁট। এক সময় বাংলার নারীরা পান দিয়ে রাঙাতেন নিজের ঠোঁটকে। তখনও বিলেতি লিপিস্টকের ছোঁয়া পায়নি বঙ্গললনার ঠোঁট। সময় পাল্টালো। বিলিতি লিপস্টিক সহজলভ্য হয়ে উঠলো এদেশে। ফোলানো ফাঁপানো চুল, একপাশে সিঁথি , গাঢ় করে লাগানো কাজল, আইশ্যাডো আর ঠোঁটে কড়া লাল লিপস্টিক। আশির দশকে আমাদের দেশের মেকাপ ট্রেন্ড ছিলো অনেকটা এমনই। তারপর আস্তে আস্তে মেকাপ কিট থেকে উধাও হতে লাগল কড়া রঙ। নানা শেডের নানা রংয়ের লিপিস্টিকের ভিড়ে লাল রঙটা হারিয়ে গেলো। বিশেষ করে শহুরে ফ্যাশনাবল নারীদের ঠোঁট রাঙানোর তালিকা থেকে। মাঝখানের দীর্ঘসময় ন্যাচারাল মেকাপই হয়ে ছিলো ট্রেন্ডি। কিন্তু আর কতদিন? কোনকিছুই একেবারে হারিয়ে যায় না। ঘুরেফিরে আবার নতুন হয়ে আসে। সময়ের নিয়ম মেনে ’রঙ’ আবারো মেকাপে ফিরতে শুরু করেছে। বিশ্বজুড়েই শুরু হয়েছে এই পরিবর্তন। আমদের দেশই বা বাদ থাকবে কেন? মেকাপ বিশেষজ্ঞরা বলছেন ২০ বছর পর ফিরে আসতে শুরু করেছে আশির দশকের রকিং মেকাপ। তবে একটু ভিন্নভাবে। ট্রেন্ড এখন রেড। বাইরের বিশ্বে ফ্যাশনে রেড জুড়ে বসেছে রাজকীয় ভংগিমায়। বিশেষ করে লিপস্টিকে। মেকাপ ছাড়া ন্যুড ফেইসের সংগে শকিং রেড লিপস্টিক। প্রায়শই হলিউড তারকারা তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন এভাবে হাজির হয়ে। রেডের ছোঁয়া লেগেছে আমাদের মেকাপেও। এখনতো বিয়ের কনের সাথে তার সহযাত্রিরাও লালচে আগুনে রাঙিয়ে নিচ্ছেন ঠোঁট। কিন্তু সমস্যা হলো লাল এমন একটি রং যা সঠিকভাবে ব্যবহিৃত না হলে পুরো মেকাপই মাটি হয়ে যায়। আবার এমন ভুল ধারণাও আছে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে শ্যামলা মেয়েদের কালচে ঠোঁটে লাল রংটি মানায়না। তবে মেকাপ বোদ্ধারা বলছেন, একমাত্র লালই হচ্ছে লিপস্টিকের আসল রং। লিপস্টিক লাগানোর মূল কারন, ঠোঁটে তারুণ্যের আভা ফুটিয়ে তোলা। একমাত্র লালই সে কাজটি ঠিকমতো করতে পারে। লাল মানানসই যে কোন বয়সে, যে কোন ঠোঁটে। তবে অবশ্যই লাগাতে হবে সঠিক নিয়ম মেনে।

    আসল লাল :

    লাল অনেকরকম হতে পারে। প্রথমেই বেছে নিন লালের কোন শেডটি আপনার জন্য মানানসই। লিপস্টিক কেনার সময় হাতের উল্টোপিঠে লাগিয়ে দেখুন ক্যাটক্যাটে লাগছে কিনা। যে রঙটি কিছুটা অফ ও মিষ্টি মনে হবে সেটাই আপনার জন্য আসল রঙ। আবার ত্বকের রঙের চেয়ে ঠোঁটের রঙ আলাদা হয়ে বলে অনেক সময়ই লিপস্টিকটি যে রঙের ঠোঁটে সে রঙটি ফুটে ওঠেনা। লাল কিছুটা সেনসেটিভ রঙ বলেই একটু এদিক ওদিক হলেই দেখতে বাজে লাগে। লিপস্টিকের অরজিনাল রঙটি ঠোঁটে ফুটিয়ে তোলার জন্য নীচের নিয়মগুলো অনুসরণ করুন-

    ১. অল্প লিকুইড ফাউন্ডেশন আঙুলে নিয়ে লিপস্টিকের মতো ঠোঁটে লাগিয়ে নিন। কিছুক্ষন রেখে শুকাতে দিন।

    ২. ফাউন্ডেশন শুকিয়ে গেলে তার উপর ফেস পাউডারের প্রলেপ দিন। ফাউন্ডেশন এবং পাউডারের এই মিশ্রণ লিপস্টিক লাগানোর জন্য চমৎকার একটি সারফেস তৈরি করবে । লিপস্টিক ক্রমশ ফেড হওয়া থেকেও বাঁচাবে।

    ৩. এবার পছন্দসই লিপলাইনার দিয়ে আউটলাইন আঁকুন। যে শেডের লিপস্টিক তার থেকে একটু গাঢ় রঙের লাইনার বেছে নিন।

    ৪. লাল লিপস্টিক অবশ্যই ঠোঁটের মাঝখান থেকে লাগানো শুরু করবেন। রঙ ভালো করে ফুটে ওঠার জন্য স্টিকের পরিবর্তে ব্রাশ ব্যাবহার করুন। ঠোাঁটের মাঝ বরাবর থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে দুপাশে ছড়িয়ে দিন।

    ৫. ঠোটের মাঝে একটা টিস্যু চেপে ধরে লিপস্টিকের প্রথম লেয়ার শুষে নিন। আবার মাঝখান থেকে শুরু করে লিপস্টিকের সেকেন্ড লেয়ার গাঢ় করে লাগান। কোনভাবেই যেন লিপস্টিক ছড়িয়ে না যায় সেদিকে লক্ষ রাখুন।

    ট্রিকি টিপস :

    ১. পাতলা ঠোঁট ভরাট দেখানোর জন্য ব্রাইট রেড শেড বেছে নিন। মোটা পুরু ঠোঁট সঠিক শেপে দেখানোর জন্য বাছুন বাদামী অথবা নীলচে লাল শেড।

    কালচে ঠোঁটে লালচে আভা :

    সাধারনত আমাদের দেশে অধিকাংশ নারীর গায়ের রং শ্যামবর্ন। শ্যামলা মেয়েদের অনেকের ঠোঁটই কালচে হয়। কালচে ঠোঁটে লাল লিপস্টিক ফুটিয়ে তোলা কিছুটা কঠিন। তবে সঠিক নিয়ম মেনে চললে কালচে ঠোঁটেই উজ্জ্বল হয়ে উঠবে লাল রঙ।

    ১. ত্বকের রঙের চেয়ে এক শেড হালকা কনসিলার বেছে নিন। এবার পুরো ঠোঁটে কনসিলার লাগিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করুন।

    ২. ঠোঁটে লিপলাইনারের রেখা আাঁকার ক্ষেত্রে দুটো ব্যপারে নজর দিন। যদি আপনার নীচের ঠোঁটের রঙ উপরের ঠোঁটের তুলনায় হালকা হয় তাহলে নীচের ঠোঁটে লাইনারের রেখা মোটা ও গাঢ় করুন। এমনকি লাইনার দিয়ে অর্ধেক ঠোঁট ভরিয়েও দিতে পারেন। এতে লিপস্টিকের রঙ আরো গাঢ় এবং সুন্দর হবে।

    ৩. ঠোঁটে সরাসরি লিপস্টিক লাগাবেন না। লিপব্রাশে লিপস্টিক লাগিয়ে ঠোঁটে দিন। এতে লিপস্টিক অনেকক্ষন স্থায়ী হয়।

    ৪. কালচে ঠোঁটের জন্য দু ধরনের লাল শেড বেছে নিন। হালকা ও গাঢ়। গাঢ় লাল শেড উপরের ঠোঁটের কর্নার থেকে শুরু করে মাঝবরাবর পর্যন্ত টেনে নিন। মাঝখানে লাগান হালকা লাল শেড। দুটো শেড যেন আলাদা মনে না হয় সেজন্য ভালোভাবে স্মাজ করে দিন।

    টিন রেড :

    টিন-এজের নিজস্ব একটা সৌন্দর্য আছে। লাল লিপস্টিক সেই সৌন্দর্যকে আরো উজ্জ্বল করে তোলে। ডার্ক ব্লাক আইলাইনারের সংগে সফট র‌্যাডিশ ব্লাশঅন আর ঠোঁটে শকিং রেড। নিজেকে আকর্ষণীয় করে তুলতে এটুকুই যথেষ্ট।

    ১. ঠোঁট পরিস্কার এবং মসৃন করে নিন। ঠান্ডার কারনে ঠোঁট ফেটে কিম্বা খসখসে হয়ে গেলে সামান্য লিপ বামের সংগে চিনি মিশিয়ে ঠোঁটে ঘষে নিন। কিছুক্ষন রেখে পরিস্কার টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলুন। গাঢ় লাল লাইনার দিয়ে আউটলাইন এঁকে নিন। খেয়াল রাখবেন আউটলাইন যাতে কোনভাবেই এবড়ো থেবড়ো না হয়ে যায়। লাইনারের রেখার উপর ঠোঁটের শেপের সৌন্দর্য অনেকটাই নির্ভর করে।

    ২. আউটলাইন আঁকার পর লাইনার দিয়েই ভেতরের অংশটুকু ভরাট করে ফেলুন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হেসে দেখুন কোন অংশ বাদ রয়ে গেল কিনা।

    ৩. এবার লিপস্টিক দিন। হালকা আঁচে এক পরত লাগাবেন। দুবার লাগালে ওভার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। একবার লাগানোর পর মনমতো না হলে দুবার লাগাতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে একটা টিস্যু ঠোঁটে চেপে ধরে বাড়তি কোট মুছে ফেলুন।

    ৪. লিপস্টিক উজ্জ্বল দেখানোর জন্য ক্লিয়ার গ্লস ব্যাবহার করুন। গ্লস কখোনোই ঠোঁটজুড়ে ব্যবহার করবেন না। তাতে লিপস্টিক ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। উপরের ঠোঁটের মাঝখানে গ্লস নিয়ে দুঠোঁটে চেপে ধরুন। তাতে পুরো ঠোঁটই গ্লসি হয়ে উঠবে।

    সবার জন্য লাল :

    লাল লিপস্টিক ভালো লাগতে পারে যে কোন বয়সেই। এমন নয় যে তরুন বয়স বা পার্টিলুকেই লাল কেবল ট্রেন্ডি হয়ে ওঠে। বরং বয়সের যখন নিজস্ব সৌন্দর্য থাকেনা টকটকে রেড লিপ চেহারা তরুন দেখাতে অনেকটাই সাহায্য করে। প্রয়োজন কেবল চেহারার সংগে মানানসই ভালো একটি লিপকালার বেছে নেয়া। লিপকালার লাগাতে না চাইলে অলটারনেটিভ হিসেবে রেড লিপ গ্লসও বেছে নিতে পারেন। বয়স বেশি হলে লাইনার লাগানোর কোন প্রয়োজন নেই। লিপস্টিক সরাসরি ঠোঁটে লাগান। শুরু করুন উপরের ঠোঁট থেকে। উপরের ঠোঁটে গাঢ় করে লিপস্টিক লাগিয়ে দু ঠোঁট একসাথে চেপে ধরুন। দেখবেন নীচের ঠোঁটে চমৎকার রঙ এসে গেছে। কোন জায়গা ফেডেড মনে হলে আঙুল দিয়ে ভালোমতো ব্লেন্ড করে দিন। এবার উপরের ঠোঁটের মাঝবরাবর গ্লস দিয়ে ঠোঁট চেপে পুরো ঠোঁট গ্লসি করে তুলুন। দেখবেন দিনভর আপনার ঠোঁট লালচে আভায় উজ্জ্বল থাকবে।